ঢাকায় এক মাস্কের দাম ১৭৫০ টাকা!

বাংলাদেশেও ছড়িয়েছে চীনের করোনাভাইরাসের আতঙ্ক। যে কারণে এ ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে হঠাৎ করে বাজারে বেড়ে গেছে ফেসমাস্কের চাহিদা। বেড়ে গেছে দামও। খোদ রাজধানীতেই এখন বিভিন্ন স্থানে, যানবাহনে কিংবা রাস্তায় যাতায়াত করছেন, তাদের মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা গেছে। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া গেলেও ১৭৫০ টাকায় একটি মাস্কের দাম শুনে অবাক হবে না, এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

রাস্তায়, ফুটপাতে, বিভিন্ন অনলাইন শপে মাস্ক বিক্রি হলেও সংকট দেখা দিয়েছে ফার্মেসিগুলোতে। এ কারণে একটি সিন্ডিকেট মাস্কের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

রাজধানীর অধিকাংশ ফার্মেসি ও সার্জিক্যাল স্টোরগুলোতে প্রায় এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে মাস্কের সরবরাহ বন্ধ। যে দু’একটি ফার্মেসিতে ফেসমাস্ক পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোও নিচ্ছে প্রায় চার থেকে পাঁচগুণ বেশি দামে। ফুটপাতে কিছু ভ্রাম্যমান দোকানে নিন্মমানের মাস্ক পাওয়া গেলেও সেগুলোর দাম রাখা হচ্ছে কয়েকগুন বেশি। সরজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর শ্যামলীর শিশুমেলার বিপরীতে টেকনোকেট হেলথ কেয়ার এণ্ড ফার্মেসিতে ফেসমাস্ক নেই গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে। ফার্মেসির বিক্রেতা সাফায়েত বলেন, ফার্মেসিতে কোন মাস্কই নেই। দাম বেশি হওয়ায় আমরা কিনছি না।

সরেজমিনে গিয়ে কয়েকটি ফার্মেসিতে মাস্কের দাম ১০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া গেলেও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। সাধারণত চীন বা জাপান থেকে বাংলাদেশে মাস্ক আসে। তবে বেশ কয়েকটি অনলাইন শপ চীন থেকে শাওমি ব্র্যান্ডের কিছু মাস্ক নিয়ে আসছে, যা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ১৭৫০ টাকায়।

ফার্মেসিতে ১০ টাকা থেকে তুলনামূলক উন্নত (ডিস্পোজেবল নন ওভেন ফ্যাব্রিক) মাস্কের দাম ২৫ টাকা। কটন মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, স্পঞ্জ অ্যান্টি ডাস্ট মাস্ক ৫০ টাকায় কিনছেন ক্রেতারা।

তবে এন-৯৫ (৮২১০) মাস্ক ২৫০ টাকা, এন-৯৫ (৮১১০এস) ১৮০ টাকা, পিএম-২.৫ মাউথ মাস্ক ১২০ টাকা কিনতে হচ্ছে গ্রাহকদের। চীন থেকে শাওমি ব্র্যান্ডের যে মাস্ক আনা হচ্ছে, সেগুলোর দাম যথাক্রমে এয়ারপপ থ্রি-সিক্সটি ডিগ্রি অ্যান্টি ফগ মাস্ক ৩৫০ টাকা, স্মার্টলি ফিল্টার মাস্ক ৪৫০ টাকা, সাওমি পিএম-২.৫ লাইট ওয়েট মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ১৭৫০ টাকয়।

বিভিন্ন অনলাইন শপের স্বত্বাধিকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে বা ফুটপাতে যে মাস্কগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো উন্নত নয়। এ ছাড়া ফার্মেসিতে যে মাস্কগুলো পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর চেয়ে স্টাইলিশ ও বাতাস ফিল্টারে কার্যকরী শাওমির মাস্কগুলো। গ্রাহকদের কাছে এগুলোর চাহিদাও বেশি।

ক্রেতাদের জন্য যে দাম অনলাইন শপগুলো নির্ধারণ করছে, তার অনেকটাই সুযোগের সদব্যবহার। কারণ, শাওমি ব্র্যান্ডের মুল সাইট থেকে কিনলে মাস্কগুলোর যে দাম নিরুপণ হয়, দেশে বিক্রি হওয়া মাস্কগুলো তার তিনগুণ বা চারগুণ দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

পাঁচ টাকার জিনিস দশ থেকে ২০ টাকা হয়ে গেছে। এত দামে বিক্রি করলে কাস্টমার ঝামেলা করে। তাই বিক্রি করছি না। সীমিত সাপ্লাই থাকা স্বত্বেও কিছু কিছু দোকানদার বেশি দামে কিনে তার কয়েকগুন বেশি দামে বিক্রি করছে। বলতে গেলে সারা দেশেই সাপ্লাই নেই। এই মাস্ক মূলত চীন থেকে আসতো।

শাহবাগ মেডিকেল কর্নারের বিক্রেতা সুমন বলেন, ৫০ পিসের বক্সের দাম এখন ৫শ টাকা। আগে ছিল একবক্স ৭০ টাকা। ফিল্টার মাস্ক ৭০ টাকা। যেটা আগে ৩৫ টাকা ছিল। অর্থাৎ ডাবলেরও ডাবল। গত ১৫ দিন ধরে সাপ্লাই বন্ধ। বিসমিল্লাহ ফার্মেসি এণ্ড ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের বিক্রেতা কাজী জামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের দোকানে কোনো মাস্ক নেই। এই মাস্ক আসতো চীন থেকে। আজাদুর রহমান ও তানজিনা পারভিন বলেন, লাজ ফার্মা থেকে আমরা দুটি ফিল্টার মাস্ক কিনেছি ১২০ টাকায়। তিন দিন আগে কিনেছি সেটা ছিল ৫০ টাকা। এখন শুনেছি দাম আরো বেড়েছে।

গাড়িচালক বিজয় কুমার বলেন, ইউনিমার্ট থেকে ৯০ টাকায় মাস্কটি কিনেছি। বাইরে হয়তো ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এখন যেহেতু মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে না তাই দামের হিসাব করবো না। পপুলার মেডিসিন কর্নারের স্বত্বাধিকারী শরিফুল বলেন, প্রায় এক যুগ ধরে ব্যবসা করছি। মাস্কের এমন সংকট আর কখনো দেখিনি। ‘দেশে ফেস মাস্কের চাহিদা বছর জুড়ে থাকে। সেটা এখন হঠাৎ করে কয়েক লাখে পৌঁছেছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজার থেকে মাস্ক উধাও হয়ে গেছে। তাছাড়া চীন থেকে তো কোনো পন্য এখন আমাদের দেশে আসছে না বরং যাচ্ছে।

এদিকে, রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাতগুলোতে ভ্রাম্যমান দোকানগুলোতে কিছু নিম্নমানের মাস্ক দেখা গেলেও সেগুলোর দামও রাখা হচ্ছে কয়েকগুন বেশি। এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, মাস্কের ক্রাইসিস এখনো ওভাবে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে আমাদের ডিজি মহোদয় ইতোমধ্যে দেশে মাস্ক প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোকে বলেছেন। যারা মাস্ক আমদানি করে তাদেরকেও বিভিন্ন দেশ থেকে মাস্ক আমদানি করার কথা বলা হয়েছে। আশা করছি এই সংকট বেশিদিন থাকবে না।

 

 

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন